
স্টাফ রিপোর্টার: নোয়াখালী জেলা শহরে বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে নৃসংশভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আলতাফ হোসেন। বুধবার (১৪ জুন) রাত ১১ টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলাম।
পুলিশ সুপার জানান, বুধবার (১৪ জুন) সন্ধ্যার দিকে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এক নম্বর আমলি আদালতের বিচারক এস এম মোসলেহ উদ্দিন মিজানের আদালতে মা-মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি আলতাফ। সে জানায় নূর নাহার বেগমের সাথে টাকা নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে প্রথমে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে সে। পরে ভিকটিমের মেয়ে ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তীকেও হত্যা করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় সুধারাম মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আসামিকে আদালতে হাজির করলে সে মামলার ভিকটিম নূর নাহার বেগম ও তাহার মেয়ে ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তীকে ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যার কথা আদালতে স্বীকার করে।
দোষ স্বীকার করে আসামি আলতাফ হোসেন আদালতে জানান, ভিকটিম নূর নাহার বেগমের সাথে তার ওমান থাকা অবস্থায় রং নাম্বারে পরিচয় হয় এবং ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে ভিকটিম নুর নাহার বেগম আসামিকে ভিসা বাতিল করে বাংলাদেশে এসে হোটেল ব্যবসা করার জন্য বলে। তার কথায় আসামি গত ৮ জুন বাংলাদেশে এসে নোয়াখালী শহরের দত্তের হাট এলাকার মাসুদ নামের এক ব্যক্তির মেসে উঠে। এরপর ১০ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নূর নাহারের বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা করে। পরদিন ১১জুন পুনরায় ভিকটিমের বাসায় গিয়ে প্রতিশ্রুতিকৃত ৩ লাখ দাবি করে। তখন ভিকটিম ২/১ দিনের মধ্যে টাকা দিবে বলে জানায়। পরের দিন আসামি আলতাফ নুর নাহারের বাসায় গেলে বাসায় তালা বন্ধ পায়।
বুধবার (১৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে আসামি ভিকটিম নূর নাহারের বাসায় গিয়ে আবারো ৩ লাখ টাকা দাবি করে। ওই সময় ভিকটিম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আসামির সাথে তার বাকবিতন্ডা শুরু হয় এবং ভিকটিম একপর্যায়ে আসামিকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর ভয় দেখালে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ওই সময় আলতাফ তার পকেটে থাকা ছুরি ভিকটিম নূর নাহারের গলায় ধরে আঘাত করে। এ সময় নুর নাহার শোরচিৎকার করে তার মেয়ে প্রিয়ন্তীর রুমে চলে যায়। এক পর্যায়ে আসামি ভিকটিমের মেয়ের রুমে গিয়ে তাকে গলায় এবং ঘাড়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ওই সময় মেয়ে প্রিয়ন্তী মাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলে আসামি তাকেও এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। ভিকটিম নুর নাহার বেগম আসামির সাথে প্রতারণা করায় তাকে হত্যা করে। তবে তার মেয়ে ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তীকে হত্যা করার ইচ্ছা আসামির ছিল না। উল্লেখিত জবানবন্দি আসামি স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করে।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটনায় ওমান প্রবাসী আলতাফ। আলতাফ হোসেন লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের আব্দুল মুনাফের বাড়ির মৃত আবুল কালামের ছেলে।