
স্টাফ রিপোর্টারঃ
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়ন-লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলার সংযোগ আঞ্চলিক মহাসড়কের চৌধুরী বাজার সংলগ্ন ভুলুয়া খালের উপর স্থাপিত বেইলী ব্রিজটির ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও শত শত যানবাহন চলাচল করছে। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্রিজটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। মেয়াদ উত্তীর্ণ ও পুরাতন এই বেইলী ব্রিজটির পাটাতনে মরিচা ধরে ভেঙ্গে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত সংষ্কার ও পাঁকা সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয় এলাকাবাসী ও যানবাহন চালকদের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা থেকে লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলায় যাতায়াতের সংযোগ ভুলুয়া খালের ওপর স্থাপিত একমাত্র বেইলি ব্রিজ এটি। রামগতি উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায় ৩০ বছর পূর্বে ভুলুয়া নদীর ওপর এ বেইলী ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এর দৈর্ঘ্য ৮০মিটার প্রসস্থ ৩মিটার। এই ব্রিজটির ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত হালকা ও ভারী যানবাহন নোয়াখালী ও লক্ষীপুর চলাচল করে থাকে। দীর্ঘদিন যাবত এর মেরামত কাজ না করায় ব্রিজটি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। মরিচা ধরে ব্রিজের পাটাতন ভেঙ্গে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
রামগতি উপজেলার চররমিজ গ্রামের অটোরিকসা চালক আহছান উল্যা (৩৫) বলেন, অটোরিকসায় যাত্রী নিয়ে এই ব্রিজ পারাপার সম্ভব না। রিকসার চাকা মরিচা ধরা স্টিলের পটাতনের ফাঁক দিয়ে ঢুকে আটকে যায়। রাতের বেলা তো দুরের কথা দিনের বেলাও এই ব্রিজের ওপর দিয়ে অটোরিকসা চালানো অসম্ভব।প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে অটোরিকসা চালকদের আয় অর্ধেক কমে গেছে। চররমিজ ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ সাহাব উদ্দিন (৪০) বলেন, ভুলুয়া নদীর ওপর ৩০ বছর আগে এই বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। নোয়াখালী ও লক্ষীপুরের দক্ষিণ অঞ্চলের লোকজনের যাতায়াতের পথ চররমিজ ইউনিয়নের এই বেইলি ব্রিজটি।দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত ব্রিজটির পাটাতনে মরিচা ধরে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ছিদ্র হয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিএনজি চালিত অটোরিকসা, মালবাহী পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক ঝুঁকি নিয়ে কচ্ছপ গতিতে পার হচ্ছে। রিকসা কিংবা মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারে না। পায়ে হেটে লোকজন চলাচল করে থাকে। এতে করে ঝুঁকি বাড়ছে। অপচয় হচ্ছে সময়।
সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব হারিছ চৌঃ বাজারের সুপারী ব্যবসায়ী উপজেলা চর রমিজ ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আবু তাহের (৪৫) বলেন, সুবর্ণচরে ব্যবসার সুবাধে এই ব্রিজ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করতে দুর্ভোগের শিকার হই। ব্রিজটি নির্মাণ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় দুই উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। তিনি দ্রুত ব্রিজটি সংস্কারের দাবি জানান।
সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ খসরু বলেন, ব্রিজটি সুবর্ণচর ও রামগতি উপজেলার মধ্যে চলাচলকারী একমাত্র ব্রিজ। এটি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ও রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের সীমানায় পড়েছে। এই ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ভারী পণ্য বোঝাই ট্রাকসহ নানা প্রকার যানবাহন অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ব্রিজ ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ ও জীবনের ঝুঁকি বেড়েই চলছে। যে কোনো সময় ব্রিজের মরিচা ধরা পাটাতন, রেলিং ভেঙ্গে যানবাহন গভীর খালে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী এই বেইলী ব্রিজ ভেঙ্গে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জরুরী ভিত্তিতে ব্রিজটি ভেঙ্গে পাকা সেতু নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি এই ব্রিজটির দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, চলতি অর্থ বছরে বেইলী ব্রিজটি সংস্কারের জন্য ৩০লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ব্রিজটি মেরামতের জন্য দরপত্র আহবান করা হবে।জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেইলি ব্রিজটি ভেঙ্গে পাকা ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য খুব শীঘ্রই একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। প্রকল্প পাস হলে নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
তারিখঃ ১৮/০৯/২০২৩ ইং
নোয়াখালী।