Select Page

আজ রবিবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি সময়: সকাল ১০:৩৭

আকাশপথের তুলনায় পিছিয়ে রেল ও সড়ক

দৈনিক নোয়াখালীবার্তা
Noakhali Barta is A News Portal of Noakhali.

ফেব্রু ১১, ২০১৮ | জাতীয়

বিশেষ প্রতিবেদক: গত কয়েক বছরে প্রকট হয়ে উঠেছে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা। সড়ক-মহাসড়কগুলোয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি রেলপথেরও। টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে সময়সূচির অব্যবস্থাপনায় দূরপাল্লার যাত্রীদের প্রায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে গত কয়েক বছরে অভ্যন্তরীণ রুটে আসন সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাড়া কমিয়েছে সরকারি-বেসরকারি সব এয়ারলাইনস। এর ফলে যাত্রী প্রবৃদ্ধিতে রেল ও সড়কপথের তুলনায় এগিয়ে গেছে আকাশপথ।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে আকাশপথের অভ্যন্তরীণ রুটে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো ৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯ জন যাত্রী পরিবহন করেছিল, যা ২০১৭ সালে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশব্যাপী ৬ কোটি ২৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছিল। এ সংখ্যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেড়ে হয় প্রায় সাড়ে ৮ কোটি। সে হিসাবে গত পাঁচ অর্থবছরে রেলওয়ের যাত্রী প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ শতাংশ।

অন্যদিকে কয়েক বছর ধরেই সড়কপথে যানজটের ভোগান্তি চলমান। এর ওপর আবার গত বছরের আগস্টের বন্যার পর সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা প্রকট হয়ে উঠেছে। সড়ক-মহাসড়কগুলোয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে দূরপাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তি পোহানোটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-নীলফামারী, ঢাকা-খুলনাসহ দেশের বেশির ভাগ সড়ক-মহাসড়কে এখন সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। ফলে ক্রমাগত দূরপাল্লার যাত্রী হারাতে শুরু করেছে সড়কপথ।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রোড মাস্টারপ্ল্যানেও সড়কপথে যাত্রী প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৯ সালে অনুমোদিত অধিদপ্তরের রোড মাস্টারপ্ল্যানে বলা হয়েছিল, পরবর্তী ২০ বছরে দেশে ট্রাক ও প্রাইভেট কারের প্রবৃদ্ধি দ্রুত হলেও বাসের ক্ষেত্রে তা হবে ধীর। কারণ হিসেবে বলা হয়, উল্লিখিত সময়ে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি পেলে রেলের দিকে মানুষ ঝুঁকবে বেশি। এ কারণে সড়কপথে যাত্রী পরিবহনে প্রবৃদ্ধি হবে ধীরগতিতে।

সড়কপথে যাত্রী কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফারুক তালুকদার সোহেল। তিনি বলেন, সারা দেশের সড়কগুলোর অবস্থা কয়েক বছর ধরে খারাপের দিকে। এ কারণে পাঁচ বছর আগেও ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের কোনো জেলা শহরে যেতে যে সময় লাগত, সেটি এখন বাড়তে বাড়তে অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে বিকল্প হিসেবে যাত্রীরা রেলপথ বেছে নিচ্ছেন। আর যাদের সামর্থ্য আছে, তারা আকাশপথে ভ্রমণ করছেন। যাত্রীর অভাবে লোকসান কমাতে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলো বিভিন্ন রুটে বাসের সংখ্যা কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলো যাত্রী কমার তথ্য দিলেও রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) দাবি করেছে, তারা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যাত্রী পাচ্ছে। সংস্থাটি জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিআরটিসির ১৯টি ডিপোতে যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য ছিল ৩ কোটি ৭২ লাখ। অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে।

গত অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই ডিপোগুলো যাত্রী পরিবহন করেছে বলে জানিয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, প্রতি বছরই যাত্রীর চাপ বাড়ছে। এ চাপ সামাল দিতে আমরা এরই মধ্যে ৬০০টি নতুন বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। পাশাপাশি নতুন নতুন রুটে বাস চালুর পরিকল্পনা হচ্ছে। এছাড়া যেসব রুটে আগে বিআরটিসির বাস চলত, বর্তমানে বন্ধ— সেগুলোয় ফের বাস চালুর চিন্তাভাবনা করছি আমরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ কোটি ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছিল রেলওয়ে। গত অর্থবছর (২০১৬-১৭) যাত্রী পরিবহনে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ হিসাবে সর্বশেষ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ৮ কোটি যাত্রী পরিবহন করেছে।

রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন রুটে দৈনিক ৩৫০টি ট্রেন চলছে। এর মধ্যে ৮৮টি আন্তঃনগর, ১২৬টি লোকাল মিক্স, ১৩২টি মেইল এক্সপ্রেস ও ডেমু এবং আন্তর্জাতিক চারটি ট্রেন। এসব ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা দৈনিক ২ লাখ ৫০ হাজার।

যাত্রী পরিবহন সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, গত অর্থবছর (২০১৬-১৭) রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবৃদ্ধির হারটি আরো বেশি, ২৫ শতাংশ। সেবার মান বৃদ্ধি, নিরাপদে নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া ও অনেকগুলো ট্রেনের রানিং টাইম কমিয়ে আনার ফলে রেলওয়েতে যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে এ বিপুল সংখ্যক যাত্রী পরিবহনে রেলওয়ের প্রয়োজনীয় সক্ষমতার অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী কোচের সংকট রয়েছে। এ কারণে যাত্রী পরিবহন কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহের বেশকিছু প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছে। এসব ইঞ্জিন ও কোচ বহরে যোগ হলে রেলের সক্ষমতা অনেকটাই বাড়বে।

যাত্রী পরিবহন প্রবৃদ্ধিতে সড়ক ও রেলপথের তুলনায় বেশ এগিয়ে আছে আকাশপথ। এয়ারলাইনসসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৫ সাল থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোয় ফ্লাইট চালু করে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইনস সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। প্রচারণার অংশ হিসেবে শুরুতেই অভ্যন্তরীণ সব রুটেই ভাড়া কমিয়ে দেয় এয়ারলাইনসটি। ব্যবসায় টিকে থাকতে সে সময় ভাড়া কমাতে বাধ্য হয় অভ্যন্তরীণ রুটে কার্যক্রম পরিচালনা করা বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোও। যার প্রভাবে গত পাঁচ বছরেই অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী বেড়েছে ৬৫ শতাংশ।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ‘বেবিচক’ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন হয় ৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯ জন, যা প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে ২০১৭ সালে এসে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ জনে। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৩ হাজার ৩১ জন।

২০১৫ সালে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন হয় ৯ লাখ ১২ হাজার ৬৪৪ জন, যা এর আগের বছরের থেকে ২ লাখ ৩২ হাজার ২২৪ জন বেশি। ২০১৪ সালে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন হয় ৬ লাখ ৮০ হাজার ৪২০ জন।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মফিজুর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী বাড়ার অন্যতম কারণ হলো সাশ্রয়ী ভাড়া। পাশাপাশি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, এয়ারলাইনসগুলোর সময়মতো চলাচল করা এবং বাসের ভাড়া ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় একটু বেশি টাকা দিয়েই মানুষ আকাশপথে যেতে উৎসাহী হচ্ছেন। তবে যাত্রী প্রবৃদ্ধি হলেও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। ফলে পাশাপাশি কয়েকটি ফ্লাইট অবতরণ-উড্ডয়ন করলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। একই সঙ্গে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো জেট ফুয়েল ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়, অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী এয়ারলাইনসগুলোকেও সে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে যাত্রীরা আরো কম খরচে ভ্রমণ করতে পারবেন।

জানা গেছে, বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এয়ারলাইনসগুলো ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজশাহী, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কক্সবাজার, যশোর ও সিলেট রুটে যাত্রী পরিবহন করছে।

বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রামে ছয়টি, যশোরে তিনটি, সৈয়দপুরে তিনটি, সিলেটে একটি এবং কক্সবাজারে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটে সপ্তাহে তিনটি এবং ঢাকা-রাজশাহী রুটে সাপ্তাহিক ছয়টি ফ্লাইট রয়েছে এয়ারলাইনসটির।

একইভাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রামে পাঁচটি, যশোরে একটি, সৈয়দপুরে একটি, সিলেটে একটি এবং কক্সবাজারে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটে সপ্তাহে দুটি এবং ঢাকা-রাজশাহী রুটে সাপ্তাহিক চারটি ফ্লাইট রয়েছে এয়ারলাইনসটির।

নভোএয়ার অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রামে পাঁচটি, যশোরে তিনটি, সৈয়দপুরে তিনটি, সিলেটে একটি এবং কক্সবাজারে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অন্যদিকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ঢাকা থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রামে চারটি, সৈয়দপুরে দুটি এবং কক্সবাজারে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, খরচ কমে আসায় দেশের মানুষের মধ্যে আকাশপথে ভ্রমণের হার বাড়ছে। তবে সরকার আরো কিছু সুবিধা দিলে যাত্রীদের আরো স্বল্প খরচে সেবা দিতে পারবে এয়ারলাইনসগুলো। তারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী ফ্লাইটগুলোর প্রত্যেকটিই প্রায় পূর্ণ যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। সড়কপথে সময় বেশি লাগায় বিকল্প হিসেবে আকাশপথেই যাচ্ছেন তারা। তবে অবকাঠামো দুর্বলতা থাকায় যাত্রীরা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ সংবাদ

Archive Calendar

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১