লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুয়া এক্সরে প্রতিবেদনের কারণে এক কলেজছাত্রকে নয়দিন ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি কারাভোগ করতে হয়েছে। তার নাম জ্যোতি হোসেন। তিনি লক্ষ্মীপুর কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী। আগামী ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি।
জ্যোতি ওই মামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছেন না তিনি। মানসিকভাবে ভেঙেও পড়ছেন। এ কারণে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও শিক্ষা জীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জ্যোতির পরিবারের অভিযোগ, তাদেরকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষ ইচ্ছেমতো কম্পিউটারে একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকের নাম-পদবির সিল ব্যবহার করে এক্সরের ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে তা আদালতে দাখিল করায় ওই ছাত্রের জামিন নামঞ্জুর করা হয়।
পুলিশ জানায়, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে উপজেলার বগা রাখালিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন চৌধুরী মিঠুকে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর বামনীর ভূঁইয়ার হাটে পিটিয়ে আহত করে টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ অভিযোগে তিনি ১৫ অক্টোবর বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল আমলী আদালতে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে একই গ্রামের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী জাবেদ চৌধুরী বেল্লালকে প্রধান ও জ্যোতি হোসেনকে চার নম্বর আসামি করা হয়।
অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করার জন্য রায়পুর থানা পুলিশের ওসিকে নির্দেশ দেয় আদালত। সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। এতে অভিযোগে থাকা সাতজনকেই অভিযুক্ত করা হয়।
মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, আদালতে দাখিল করা এজাহারের সঙ্গে বাদী এক্সরে প্রতিবেদন ও চিকিৎসকের স্বাক্ষর-পদবির সিল ব্যবহার করা প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বলা হয়, ইসমাইল হোসেন ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর রায়পুর পদ্মা ডায়গনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেন্ট সেন্টারে আধুনিক মেশিনে এক্সরে করেছেন। তার হাতে হাড়ভাঙা জখম হয়। চিকিৎসার আইডি নম্বর ৮৮। চিকিৎসক প্রফেসর মো. মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়।
তবে পদ্মা ডায়গনস্টিকের চেয়ারম্যান শহিদ উল্যাহ জানান, বিষয়টি আমরাও জেনেছি। এটি ভুয়া ও জাল এক্সরে প্রতিবেদন। ওই দিনের ৮৮ নম্বর আইডির রোগীর সঙ্গে এর নাম-ঠিকানান মিল নেই। এছাড়া যে চিকিৎসকের নাম-পদবি ব্যবহার করা হয়েছে-ওই নামের কেউ কখনও প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল না। বিভ্রান্তি নিরসনে আমরা একটি প্রত্যায়নপত্রও দিয়েছি।
জ্যোতি হোসেন বলেন, জখমের ভুয়া প্রতিবেদন দাখিল করার কারণে আদালত আমার জামিন নামঞ্জুর করেন। এজন্য আমি নয়দিন কারাগারে ছিলাম। মামলার কারণে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছি না। আমার শিক্ষা জীবনের বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ওই মামলার আসামি জাবেদ চৌধুরী বেল্লাল বলেন, জ্যোতি আমার ভাতিজা। জমি দখলে নিতে মিথ্যা মামলায় পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে আসামি করা হয়েছে। ভুয়া এক্সরে প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। মিথ্যাবাদী মামলার বাদীর ফাঁদে পুলিশও পা দিয়েছে। টাকার বিনিময়ে কাগজপত্র যাচাই না করেই আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ।
এক্সরে প্রতিবেদনটি সঠিক দাবি করে মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন চৌধুরী মিঠু বলেন, আমার ওপর আসামিরা অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এজন্য কাগজপত্র আদালতে দাখিল করে মামলা করেছি। আদালতেই মামলাটি মোকাবেলা করা হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রায়পুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, চিকিৎসকের এমসি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। টাকার বিনিময়ের অভিযোগ সঠিক নয়। এক্সরের প্রতিবেদনটি ভুয়া ছিল কিনা তা আমার জানা নেই।