লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর সদরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরভূতা হাতেম আলী সমবায় সমিতির নামে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি টাকার কাজে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।
কৃষকদের স্বার্থ বাদ দিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) সাইফুল হাসান রনি প্রকল্পটির কাজ করছেন। বিতর্কিত ওই সমিতির নামে ইচ্ছেমতো কাজ করার অভিযোগে একাধিকবার খাল খননের কাজ বন্ধ করে দেয় ক্ষুব্ধ লোকজন। এ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের অনুসারী ও কৃষকদের লোকজন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।
সবশেষ মঙ্গলবার বিকেলে এ নিয়ে চরভূতা গ্রামে বিক্ষোভ করে কৃষকরা। এ সময় তারা প্রকল্পের মেঘনাবাজার এলাকায় ভেকোমেশিন দিয়ে খাল খননের মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান তার অনুসারীদের নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ৫ কৃষক আহত হয়।
কাজে অনিয়মের অভিযোগে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন আতঙ্কিত কৃষকরা। এ ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেছেন, কৃষকদের কল্যাণেই কাজটি করা হচ্ছে। তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কাজ করা হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকার ক্ষুদ্র পানি সম্পদ প্রকল্প হাতে নেয়। এর আওতায় চরভূতা হাতেম আলী উপ-প্রকল্পের জন্য ২০১৫ সালে ৯০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
এর তত্ত্বাবধান করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। এর মধ্যে সমিতির কার্যালয়, ৬ কিলোমিটার খাল খনন, ৯টি ড্রেন (দেড় কিলোমিটার) নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ৮ লাখ টাকা দেয়ার কথা রয়েছে। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইনসাফ ব্রাদার্স কাজটি পায়।
পরে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি ওই ঠিকাদার থেকে কাজটি নেয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা করা সম্ভব হয়নি।
চরভূতা গ্রামের নুরুল ইসলাম, নুরুল করিম, সিরাজ ও আবদুল মতিনসহ ১৭ জন কৃষক জানায়, ওই প্রকল্পে জিয়ার খালে অপরিকল্পিতভাবে খনন করা হচ্ছে। পানি প্রবাহের জন্য খালের যথেষ্ট প্রশস্ত ও গভীরতা থাকলেও একটি মহল এর উন্নয়নের নামে কোটি আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে। এ খনন কাজ করলে দুই পাড়ের বসতি ভেঙে যাবে।
এতে চরভূতা ও আশপাশ এলাকার প্রায় ৫ হাজার কৃষকের বাড়িঘর ও ফসলি জমির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা থাকলেও ফের ফসলি জমি নষ্ট করে ড্রেন নির্মাণের চেষ্টা করছে। এছাড়া ক্ষতিপূরণের ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে চলছে লুকোচুরি।
খালের পাশের জমির মালিক সুমন জানান, তার ৪ একর জমিতে দেড় লাখ টাকার বিভিন্ন বনজ গাছ রয়েছে। এটি খনন হলে গাছগুলো কাটা পড়বে। অথচ ক্ষতিপূরণের জন্য টাকা বরাদ্দ থাকলেও ঠিকাদার তা অস্বীকার করছেন।
চরভূতা হাতেম আলী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাকছুদ বলেন, সেচ ড্রেন নির্মাণ ও খাল খননে কৃষকদের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তাদের স্বার্থে ও কৃষি উন্নয়নে সরকার এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর সুফল কৃষকরাই পাবেন।
ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সমিতির সদস্য সাইফুল হাসান রনি জানান, কৃষকদের স্বার্থে বিঘ্ন ঘটে এমন কাজ করা হবে না। ৬ কিলোমিটার খালের মধ্যে আধা কিলোমিটার এলাকার কৃষকরা এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি মহল তাদেরকে উসকানি দিচ্ছে। সংকট নিরসনের জন্য স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। নিয়ম মেনে কাজটি সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, কয়েকজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি সমাধানে ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম রশিদ আহমেদ জানান, প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মাসুম আল মামুনকে আহ্বায়ক করা হয়। ওই কমিটিকে সরেজমিন গিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।