স্টাফ রিপোর্টার: অনেক বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে সাত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জীবন। তারা সবাই পাবনার সদর উপজেলার দৌগাছি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছে।
শিক্ষাকে অমূল্য সম্পদ মনে করে মনের প্রবল আগ্রহ নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্রে বসছে পরীক্ষা দিতে।
পড়ালেখা শেষে সরকারি বড় কর্মকর্তা হয়ে অসহায় মানুষে পাশে দাঁড়াতে চায় এই অদম্য সাত শিক্ষার্থী। সেই লক্ষ্যে সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আলোকিত জীবন গড়ার স্বপ্নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা।
অত্মপ্রত্যয়ী এই সাত শিক্ষার্থী হলো- নরসিংদীর রমিজ উদ্দিনের ছেলে রোমান মিয়া, চাঁদপুরের আনোয়ার গাজীর ছেলে মো. শাজাহান গাজী, টাঙ্গাইলের জুলহাস উদ্দিনের ছেলে মিনাজ উদ্দিন, জয়পুরহাটের ফরিদ হোসেনের ছেলে রিয়াদ হোসেন, যশোরের মনিরুজ্জামানের ছেলে হাফিজুর রহমান, পাবনা সদরের ওয়াজেদ মোল্লার ছেলে শোভন মোল্লা ও মো. ইসহাকের ছেলে শাকিল প্রামাণিক।
কথা বলে জানা যায়, প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অভাব-অনটনে এই জন্মান্ধদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কেননা তাদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্রেইল পদ্ধতির সুবিধা নেই দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই। সাধারণ পদ্ধতিতে পরীক্ষার সময় শ্রুতি লেখককে পারিশ্রমিক দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। সেই সামর্থ্য নেই তাদের। তারপরও থেমে থাকেনি সংগ্রামী এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাজীবন। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টের সহায়তায় চলছে পড়ালেখা।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রিয়াদ হোসেন বলে, তাকে পড়াশোনা করানোর মতো সামর্থ্য তার পরিবারের নেই। তাই অন্যের সহায়তায় করছেন পড়ালেখা। শিক্ষাজীবন শেষ করে ওই ঋণ শোধ করতে চায় সে।
আর ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করতে চায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফিজুর রহমান।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাকিল প্রামাণিক বলে, বোর্ড থেকে ব্রেইল পদ্ধতির কোনো বই সরবরাহ করা হয় না। তাই লেখাপড়া করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা।
মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসাইন সমকালকে বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে ৫৫ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছে। প্রতিষ্ঠানটির ৭ শিক্ষার্থ এখন একাদশ শ্রেণিতে ও ২ জন এমএ পড়ছেন।
পাবনার শিক্ষাবিদ প্রফেসর কামরুজ্জামান বলেন, এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জকে সহায়তা করা উচিত। তাদের এই শিক্ষা-যুদ্ধ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
এদিকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক এবং তাদের সরকার সম্ভাব্য সহায়তা করবে বলে আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো।