Select Page

আজ রবিবার, ২৬শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ৩রা রমজান, ১৪৪৪ হিজরি সময়: ভোর ৫:৩৩

রেমিটেন্সের সঙ্গে তেলের দাম বৃদ্ধি

দৈনিক নোয়াখালীবার্তা
Noakhali Barta is A News Portal of Noakhali.

মার্চ ১, ২০১৮ | জাতীয়

স্টাফ রিপোটার: বৃহস্পতিবার শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ দিনেও ১১৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে, এই অঙ্ক গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিসাবে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসীরা বেশি অর্থ দেশে পাঠানোয় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বড় অংশই আছে তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে। কয়েক বছর আগে জ্বালানি তেলের দর পড়ে যাওয়ার পর রেমিটেন্স কমার পেছনে একে কারণ দেখাচ্ছিলেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এখন ৬৩ থেকে ৬৭ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে এর দর ছিল ৪০ ডলারের কিছু বেশি।

অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ প্রবাস আয় আসে। তেলের মূল্য হ্রাস এবং অভিবাসী কর্মীদের বিষয়ে দেশগুলোর বিভিন্ন নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাস আয় প্রবাহ আশানুরূপ ছিল না।

“পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উত্তরণ ঘটছে। তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। সেখানকার প্রবাসীরা এখন বেশি আয় করছে; যার ফলে বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারছেন।”

বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা।

দেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।

জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়াও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকাররা।

মুহিত বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার রেমিটেন্স সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন দেশে।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এসেছে ৯৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলার।

এ হিসাবে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে এই ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স বেড়েছে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ রেমিটেন্স বেশি এসেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ২৪ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। সরকারি দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৯ লাখ ডলার।

৩৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৪ কোটি ৫ লাখ ডলার। নয়টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে, ২৩ কোটি ডলার।

রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

গত ২৯ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় তিনি বলেছিলেন, চলতি অর্থবছরে রেমিটেন্স ১৪ বিলিয়ন (এক হাজার ৪০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে। এরপর প্রতিবছরই রেমিটেন্স কমেছে।

এখন রেমিটেন্স বাড়ার পিছনে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ারও ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, “আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি। সে কারণে ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই রেমিটেন্স আনতে অতি বেশি উৎসাহী হয়েছে।

“বেশি টাকা পাওয়ায় প্রবাসীরাও বৈধ পথে টাকা পাঠাচ্ছেন। কার্ব মার্কেট এবং ব্যাংকে ডলারের দাম এখন সমান। সে কারণেই কোনো ঝুঁকি নেই ভেবে হুন্ডির মাধ্যমে না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।”

ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার (পণ্য আমদানির ঋণপত্র) পরিমাণ বেড়েছে। তাতে ব্যাংকগুলোর বেশি ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে।

“সে কারণে ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনেই তাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স আনতে আগ্রহী হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৩ টাকায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক বাংকগুলোর কাছে ৮৩ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। আর ব্যাংকগুলো সেই ডলার ৮৪ টাকার বেশিতে বিক্রি করেছে।

কার্ব মার্কেটেও (খোলা বাজারে) এর চেয়ে কম দরে ডলার বিক্রি হয় বলে মতিঝিলের ডলার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রিপন জানিয়েছেন।

টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ডলার অবমূল্যায়িত ছিল। ভারত, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছিল। তার সুফল তারা পেয়েছে।

“আমরা অনেক দেরিতে সেই কাজটি করেছি। আমরাও তার সুফল পাচ্ছি। হুন্ডি কমছে, রেমিটেন্স বাড়ছে।”

রেমিটেন্স বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১৩৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল।

গত দুই মাসে সেই রিজার্ভ বেড়ে ৩৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। তবে আগামী সপ্তাহে আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের রেকর্ড ১৫৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার আমদানি বিল শোধের পর ফের তা ৩৩ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

দুই মাস পর পর আকুর দেনা শোধ করে বাংলাদেশ।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ সংবাদ

Archive Calendar

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১