নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ রিপোর্টাস ক্লাব নোয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল বলেছেন আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ও ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং মধ্যম-আয়ের দেশ রূপান্তরের যে সংগ্রাম শুরু করেছে তাতে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের জনগণের পাশাপাশি প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স ও অনলাইন মিডিয়ার মফস্বল সাংবাদিকদের সংগ্রাম কিংবা অবদান কম নয়।
তিনি বলেন মফস্বলের একজন সাংবাদিক প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রান্তের সমস্যা, সম্ভাবনা, অনিয়ম, দুর্নীতির খবর একাই কেন্দ্রে পৌঁছান। ডিজিটাল দেশ রূপান্তরের সংগ্রাম করতে গিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তাকে দৃষ্টি রাখতে হয় সর্বদা। রাজধানী অথবা কেন্দ্রের সাংবাদিকদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পরিশ্রম করেন মফস্বল সাংবাদিকরা। কিন্তু কেন্দ্রের সাংবাদিকরা সরকার এবং বিভিন্ন মাধ্যমে মূল্যায়িত হলেও বঞ্চিত মফস্বলের সাংবাদিকরা। তাদের বিরুদ্ধে নানা সময় নানা সমালোচনা হয়। সকল সমালোচনার ভিড়েও বাংলাদেশের সকল গৌরব গাঁথা অর্জনে মফস্বল সাংবাদিকদের অংশীদারিত্ব রয়েছে এটা বললে ভুল হওয়ার কথা নয়!
সম্প্রতি, সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক সোহেল বলেন প্রান্তিক জনপদের খবর লিখতে গিয়ে অনেক সময় সুবিধাবাদী-স্বার্থান্ধ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলার মিথ্যে মামলা আর নির্বিচার হামলার শিকার হন মফস্বল সাংবাদিকরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা পথ চলেন এবং অবহেলিত প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের জন্য কাজ করেন। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বললেই কারও না কারও বিপক্ষে যায় সংবাদ, কারও স্বার্থে লাগে আঘাত। তখন জানে মেরে ফেলার কথাও ভাবেন ওইসব ভদ্রবেশী মানুষগুলো। এ রকম হুমকি-ধমকি, হামলা-মামলা, বিদ্বেষ-রোষানল, ঝড়-তুফান মাথায় নিয়ে দেশ এবং জাতির পক্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন নির্যাতিত নিপিড়িত মফস্বল সাংবাদিকরা।
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এইসব বিষয়গুলো প্রচার না করায় ব্যাপারটি হয়তো অনেকের অগোচরে রয়ে গেছে। একটু মনোযোগ দিলে সবাই বুঝতে পারবে মফস্বল সাংবাদিকরা নিজ নিজ এলাকার অবহেলিত, অনুন্নত, উন্নয়ন-বঞ্চিত জনপদের মুখপাত্রের ভূমিকায় কাজ করছেন।
সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা, এই কথা শহুরে সাংবাদিকেরা হয়তো উপলব্ধি করেন কিন্তু মফস্বলে ছুটে বেড়ানো সাংবাদিকেরা তা হাড়ে হাড়ে অনুভব করেন। এইসব জেনেই তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং মধ্যম-আয়ের দেশ রূপান্তরের গতিশীল ও আধুনিক সংস্করণের সংগ্রাম বেছে নিয়েছেন তারা।
সোহেল এর ব্যক্তি জীবন নিয়ে আলোচনা : নোয়াখালী সদর উপজেলার পশ্চিম চরউরিয়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বাবা মো. বাদশা মিয়া এবং মাতা সামছুন নাহারের সংসারে ১৯৯১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন মোহাম্মদ সোহেল। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ৬ষ্ঠ। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য ও সমাজ সংগঠক ছিলেন তিনি। ২০০৪ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জেলা শহর মাইজদীতে লগি-বৈঠার মিছিলে সরকার দলীয়দের হামলায় শারীরিক লাঞ্চিত হন সোহেল। ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকায় ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে মান্নান নগর আঞ্চলিক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত তখনকার ওই টকবগে কিশোর।
২০০৮ সালে সোহেল ইসহাকপুর মেজর মান্নান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান কলেজে এইচএসসি’তে র্ভতি হন। ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রয়ারি দৈনিক সচিত্র নোয়াখালী পত্রিকায় ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় প্রবেশ তার। “চরউরিয়ায় বিয়ের আসর থেকে কনে পলাতক” শিরোনামে প্রকাশিত হয় তার প্রথম সংবাদ। দৈনিক সচিত্র নোয়াখালী পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক আমিরুল ইসলাম হারুন তার ‘সাংবাদিকতা’ জীবনের একমাত্র ওস্তাদ।
পড়া-লেখার পাশাপাশি সোহেল চালিয়ে যান ‘সাংবাদিকতা ও রাজনীতি’। ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান কলেজে প্রথম ছাত্রলীগের আনুষ্ঠানিক সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনে সোহেল সভাপতি প্রার্থী হয়ে ওই কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। তখনকার সময়ে সোহেল সহ উল্লেখযোগ্য কয়েক জনের হাত ধরেই সদর পশ্চিমাঞ্চলে ছাত্রলীগের রাজনীতি চাঙ্গা হয়।
২০১০ সালে নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় পুলিশের লাঠি চার্জে শরীরের মেরুদন্ড এবং পায়ে চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন সোহেল। ওই আঘাতে প্রায় দেড় বছর চিকিৎসাধীন থাকায় ২০১০-১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ভালো ফলাফল করতে পারেননি তিনি। পরের বছর ২০১২ সালে মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর নোয়াখালী সরকারি কলেজে বি.বি.এস (ডিগ্রী পার্স) এ ভর্তি হন। ওই বছরই নোয়াখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলনে আহবায়ক নির্বাচিত হন সোহেল। ২০১৫ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে বি.বি.এস (ডিগ্রী পার্স) করে একই কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে চেলেঞ্জ হিসেবে নিয়ে জেলার সমস্যা, সম্ভাবনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মফস্বল সাংবাদিকতার প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত রাখায় ২০১০ সালে দৈনিক বাংলার দূত পত্রিকার নোয়াখালী প্রতিনিধি, ২০১২ সালে দৈনিক সচিত্র নোয়াখালী পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক বাংলার দূত পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পান। ওই বছর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন দৈনিক সংবাদ প্রতিক্ষণ পত্রিকায়। বস্তু-নিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে নানা হুমকি-দুমকিতে ভীত না হয়ে এগিয়ে যান সাংবাদিকতার তৃণ-শিখড়ে। ২০১৪ সালে দৈনিক সচিত্র নোয়াখালী পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায়।
তরুণ সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ২০১৫ সালে ইয়ুথ র্জানালিষ্ট ফোরাম বাংলাদেশ নোয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তরুণ-মেধাবী সাংবাদিক সোহেল। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ রিপোর্টাস ক্লাব নোয়াখালী জেলা শাখার সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। একই বছর তিনি দৈনিক ভোরের কাগজ, দি ডেইলি আওয়ার টাইম, ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম এর নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি হিসিবে যোগ দেন। তার সম্পাদনায় পাঠক সমাজে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সংবাদ সংলাপ ডটকম নামের অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
এদেশের তরুণ সমাজের কল্যাণে কিছু করার প্রত্যয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নবগাঁও শান্তি সংঘ, সবুজ পল্লী উন্নয়ন সংঘ, সচিত্র জ্ঞান গৃহ সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। ছাত্র জীবনে ২০১০ সালে মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান কলেজ থেকে প্রথম স্মরণিকা “একুশ আমার অহংকার” প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে তার প্রকাশিত সাহিত্য ও সংস্কৃতির কাগজ মাসিক সুবর্ণ বার্তা উল্লেখযোগ্য।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং মধ্যম-আয়ের দেশে রূপান্তরে মফস্বল সাংবাদিকদের সংগ্রামের বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল আরো বলেন উন্নত বিশ্বের কোটি কোটি পাঠকদের বেঁচে থাকতে অক্সিজেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে সংবাদ মাধ্যম। সারাবিশ্বের সংবাদ পাঠকদের কাছে দ্রুত বাংলাদেশের সফলতা, উন্নয়ন, সমস্যা-সম্ভাবনা তুলে ধরতে কাজ করছে প্রান্তিক জনপদের সাংবাদিকরা। পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল এবং মধ্যম-আয়ের দেশে রূপান্তর হচ্ছে। এই অর্জনে সরকারের পাশাপাশি সংবাদ কর্মীদেরও অবদান রয়েছে। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে ডিজিটাল সাংবাদিকতায় প্রভাব ফেললেও বস্তু-নিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে প্রান্তের সাহসী সাংবাদিকরা কখনোই ঝিমিয়ে পড়বেন না।
ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সাংবাদিকদের পেশাগত মান-উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদি ও স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরী বলে মনে করেন মোহাম্মদ সোহেল।
নোয়া/বা/বি/21/04