Select Page

আজ সোমবার, ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি সময়: রাত ৯:৫৪

নোবিপ্রবি’র দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন ড. এম অহিদুজ্জামান

নোয়াখালী বার্তা ডেস্ক

এপ্রি ২৪, ২০১৯ | জাতীয়

মোহাম্মদ সোহেল :
প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ক্রান্তিকালে ভিসি হিসেবে তিনি ২০১৫ সালের ২ জুন দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নানা প্রতিকূতার মধ্যেও তিনি নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন। যেখানে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন, সংগ্রাম, সংঘর্ষ লেগেই থাকত সেই ক্যাম্পাসে এখন শিক্ষার মনোরম পরিবেশ। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত। সেখানে ফিরেছে একাডেমিক শৃঙ্খলা। বর্তমানে চালু রয়েছে ২৮টি বিভাগ ও দুটি ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে নোবিপ্রবিকে বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। ড. অহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন-২০১৯। উন্নত বিশ্বের আদলে শিক্ষার মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তিনি ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাও নিয়েছেন।

জানা গেছে, ড. অহিদুজ্জামান যোগদানের পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে স্থাপিত হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, যা পরবর্তী সময় সংস্কারের মাধ্যমে আরও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নোবিপ্রবিতে প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ছয়টি বাস ক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানে বাসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯টিতে। ফলে নিরসন হয়েছে শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট। ড. অহিদুজ্জামানের মেয়াদের চার বছরে খোলা হয়েছে ১৪টি বিভাগ। এছাড়া তিনি শিক্ষকদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৩টি সিভিলিয়ান বাস (মিনিবাস) ও ৪টি মাইক্রোবাস এবং ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের জন্য অত্যাধুনিক তিনটি গাড়ি ক্রয় করেছেন। কেনা হয়েছে উন্নতমানের একটি অ্যাম্বুল্যান্স।

মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিল হল চালু হয় ড. অহিদুজ্জামানের যোগদানের পর। সংস্কার করা হয় ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হল ও হযরত বিবি খাদিজা হল। বর্তমানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কাজ নির্মাণাধীন রয়েছে। পাশাপাশি তিন তলাবিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য উপাসনালয়ের নির্মাণকাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

এছাড়া একাডেমিক ভবন-২ এর ৪র্থ তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ একাডেমিক ভবন-৩ এর নির্মাণকাজ চলছে দ্রুতগতিতে। ভবনটি পাঁচ লাখ স্কয়ার ফিট জায়গার ওপর ২০ তলাবিশিষ্ট হবে বলে জানা গেছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য পাঁচ তলাবিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। এই ভবনটিতে তাদের থাকার জন্য ৮০টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। পাশাপাশি হল প্রভোস্টদের থাকার জন্য ৬ তলাবিশিষ্ট ভবনের তৃতীয় তলার কাজ চলছে। ১০ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন স্থাপন করা হয়েছে। লাইব্রেরিতে সংরক্ষণের জন্য নিজ উদ্যোগে বই হস্তান্তর করেছেন ভিসি ড. অহিদুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পকুরের সৌন্দর্য বর্ধনে চারপাশে বৃক্ষরোপণ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পতিত ২০ থেকে ২৫ একর জায়গায় বর্ষাকালে মাছ ও শুকনো মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। প্রতি বছর এক হাজার থেকে বারশত মণ ধানের ফলন হয় বলে জানা গেছে। ক্যাম্পাসে সুপেয় পানি সরবরাহে অত্যাধুনিক পানির ফিল্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে পুরো ক্যাম্পাসে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হয়।

এরই মধ্যে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মোবাইল অ্যাপস অ্যান্ড গেইম ডেভেলপমেন্ট ল্যাব এবং একটি নেটওয়ার্কিং ল্যাব তৈরি হয়েছে। যার ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে আইসিটি মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরেই তৈরি হতে যাচ্ছে বিজনেস ইনকিউবেটর সমৃদ্ধ পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক।

এছাড়া স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ নামে একটি বাধ্যতামূলক কোর্স চালু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোপরি দৃশ্যমান যে উন্নয়ন, তা ড. অহিদুজ্জামানের সময়ই হয়েছে।

অসাম্প্রদায়িক এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা অহিদুজ্জামান বাল্যকাল থেকেই মুজিব-আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিসংগ্রামে বয়সের সীমাবদ্ধতায় তাকে হাতিয়ার তুলে নিতে দেয়নি বটে, তবে মুক্তিসেনাদের কাছে তথ্য আদান-প্রদান করে পরোক্ষ সংগ্রাম তাকে শিখিয়েছিল দেশমাতৃকার প্রতি গভীর অনুরাগের শিক্ষা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মতো নিকৃষ্টতম ঘটনার প্রতিবাদে কিশোর বয়সেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের আস্ফালনকে উপেক্ষা করে নির্ভীক চিত্তে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে মুখর ছিলেন তিনি।

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় ছাত্র হিসেবে বিপুল ভোটে তিনি ডাকসুর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছিলেন ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও মুক্তিসংগ্রামের চেতনা ধারণ করে ঢাবির জনপ্রিয় ছাত্র অহিদুজ্জামান যোগ দেন শিক্ষকতা নামক মহান মেধাবী এ শিক্ষক ২০০১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিক্ষকতার মহান পেশায় এসে শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে অগ্রগামী ছিলেন ড. অহিদুজ্জামান। ফলশ্রুতিতে ২০১২ সালে বিপুল ভোটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ২০১২-১৩ সালে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

দেশের ক্রান্তিকালে ড. অহিদুজ্জামান ২০১৫ সালের ২ জুন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভিসি হিসেবে যোগদান করেন। ভগ্নস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির চাকা ঘুরিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের নোবিপ্রবিতে ভিসি ড. অহিদুজ্জামানের উন্নয়ন প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ফলশ্রুতিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এদিকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সম্প্রতি জাপানে শান্তি পদক পেয়েছেন ড. অহিদুজ্জামান। দেশটির সর্ববৃহৎ হানামাতসুরি উৎসবে (বুদ্ধজয়ন্তী উৎসব-২০১৯) তাকে ‘টোকুরিন-জি এশিয়ান বুদ্ধিস্ট পিস অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ প্রদান করা হয়।

তবে দুঃখজনক হলো ড. অহিদুজ্জামান নোবিপ্রবির ভিসি হিসেবে ৪ বছর সময় পার করলেও স্বাধীনতাবিরোধী একটি কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে মেয়াদের এক বছর তেমন কোনো কাজ করতে পারেননি। ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তিনি হয়রানির শিকার হন। তবে তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, ড. অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ছিল রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক।

প্রফেসর ড. অহিদুজ্জামান বলেন, নোবিপ্রবিকে ভারত, জাপান, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদলে উন্নত ও গবেষণা উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। আমি চাই নোবিপ্রবি হবে দক্ষিণ এশিয়ার কেমব্রিজ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের জ্ঞানের বাতিঘর।

ভগ্নপ্রায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু দক্ষিণ বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলেরই নয়, পুরো বাংলাদেশের জ্ঞানের বাতিঘর হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

আগামী ৩১ মে নোবিপ্রবির ভিসি হিসেবে সফল এই মানুষটির মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। ফলে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, আজ তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়টির অগ্রগতি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। দলমত নির্বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নোয়াখালীবাসী ড. অহিদুজ্জামানকে আবারও ভিসি হিসেবে দেখতে চান। সেজন্য তারা নোবিপ্রবির ভিসি হিসেবে পুনরায় ড. অহিদুজ্জামাকে নিয়োগ দিতে উন্নয়নের রূপকার দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

  • নো/বা/এমএস/দু
Facebook Comments Box

সর্বশেষ সংবাদ

Archive Calendar

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০