ষ্টাফ রিপোর্টার :
নোয়াখালী সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন করে সংযোজন হয়েছে ‘মাদার্স ক্লাব’। এ ক্লাবের মাধ্যমে একজন অংশীদার হিসেবে মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষাবান্ধব পরিসর তৈরী করছেন। বর্তমানে জেলা সদরের বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলো ছড়াচ্ছেন ‘ মাদার্স ক্লাব’। এ ক্লাব গঠনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মায়েদের পদচারণায় এখন মূখরিত শিক্ষাঙ্গন।
নোয়াখালী সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস এ ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন। উপজেলার চরমটুয়া, দাদপুর, আন্ডারচর সহ দুর্গম চরাঞ্চলে মাদার্স ক্লাব বাস্তবায়নে কাজ করেছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ মুহীউদ্দীন।
মুহাম্মদ মুহীউদ্দীনের উদ্যোগে উপজেলার ১৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যায়য়ে মধ্যে প্রায় ৩০টি বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ‘মাদার্স ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ক্লাবে মায়েদের দল ভাগ করে ওই দলগুলো থেকে অগ্রগামী মায়েদের দল দ্বারা ক্লাব পরিচালনা করা হচ্ছে। এর তদারকিতে কাজ করছেন বিদ্যালয় ক্যাচমেন্ট এলাকার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক। এ ক্লাবের অগ্রগ্রামী মায়েদের দলকে মাদার ব্রিগেড এ আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার পানামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারাহীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম আন্ডারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায় বিদ্যালয়ের একটি নির্দিষ্ট কক্ষে মায়েরা হস্ত শিল্প তৈরী করছেন। আবার কেউ কক্ষের এক কোণে স্থাপিত আনন্দ পাঠাগারে বই পড়ছেন। কয়েকজন মা হাতে টিফিন বক্সে পুষ্টিকর খাবার নিয়ে সন্তানের অপেক্ষা করছেন। কক্ষের বাহিরে লাল রঙ্গ দিয়ে লিখা রয়েছে ‘মাদার্স ক্লাব’। এ ক্লাবের উদ্দেশ্য এখন সবারই জানা।
ক্লাবের অগ্রগামী দলের মা আমেনা আক্তার বলেন সংসারের কাজ গুছিয়ে মাদার্স ক্লাবে নিয়িমিত আসেন তারা। এখানে সন্তানের মানসম্মত শিক্ষায় নানা নির্দেশনা পান। যাহা সন্তাদের শেয়ার করায় তারা এখন স্কুল কামায় করে না। মা রৌশন বেগম বলেন ক্লাবে উপস্থিত থাকায় তার শাসন আর ভালবাসায় সন্তান এখন ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শিখে।
সন্তানের যতেœ মাদার্স ক্লাব সহায়ক হিসেবে কাজ করছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন অভিভাবক খাদিজা বেগম, দিপ্তি রায় ও মনোয়ারা বেগম। সন্তানদের পুষ্টিকর খাবার, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করণসহ নানা বিষয়ে তারা এখান থেকে ধারণা নিয়ে থাকেন।
উপজেলার খলিশাটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাঈমুল ইসলাম মুরাদ বলেন প্রাথমিকে মাদার্স ক্লাব এখন মডেল। এটি স্থাপনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী হচ্ছে। তিনি বলেন এ ক্লাবের কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতে উৎসাহ পাচ্ছে। মায়েরাও ক্লাবে উপস্থিত হয়ে আনন্দ পাঠাগারে বই পড়া, সচেতনতামূলক আলোচনা ও হস্ত শিল্প তৈরীতে অংশ নিচ্ছেন।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ মুহীউদ্দীন বলেন মায়েদের উৎসাহ প্রদানের একটি মডেল প্রক্রিয়া হলো ‘মাদার্স ক্লাব’। এ ক্লাবের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সন্তানের প্রতি মায়ের দায়িত্বে সচেতন করা। সন্তানের শিক্ষার মান-উন্নয়নে এ ক্লাব কার্যকর ভূমিকা রাখবে। মাদার্স ক্লাবে উপস্থিত মায়েদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এতে বিদ্যালয়ে মায়েদের অংশগ্রহণ বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী এবং সময় উপযোগী উদ্যোগ বলেও মনে করেন তিনি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন সেখ বলেন ‘বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি, নিয়মিত মিড ডে মিল নিয়ে আসা, পরিষ্কার জামা-কাপড় পড়ে বিদ্যালয়ে আসা, ক্লাসের পড়া ক্লাসে আদায় করার ক্ষেত্রে মায়েদের অবদান অনেক বেশি। এক্ষেত্রে ‘মাদার্স ক্লাব’ অনেক ভালো ভূমিকা পালন করছে। আমরা ক্রমান্বয়ে পুরো উপজেলায় এ ক্লাব বাস্তবায়ন করবো’।