স্টাফ রিপোর্টার: উত্তর-পূর্ব বাংলার উড়াল পঙ্খির দেশের তিনি ছিলেন গানের একটি ‘সুয়া চান পাখি’। হিজলে তমালে ছাওয়া আদিঅন্তহীন হাওরের বুক থেকে গান নিয়ে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারা বাংলায়। জল ছলছল লিলুয়া বাতাসে ভেসে সেই অপরূপ গানে গানে স্পর্শ করেছিলেন সমগ্র বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষী মানুষদের। মরমী গানের ‘সুয়া চান পাখি’ বারী সিদ্দিকী এখন চলে গেছেন অধরা জগতের দূর নীলিমায়।
বাংলার আত্মা থেকে আহরিত গানকে করেছিলেন তিনি জীবনের ধ্রুবতারা। কথা ও সুরের সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে যেতেন বেদনার প্রহরে প্রহরে। তার গান শুধু গান মাত্র ছিল না, ছিল হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া রাশি রাশি বেদনার পুঞ্জিভূত মেঘমালা। আধুনিক ও যান্ত্রিক জীবনে আত্মা ও মননের বেদনার কথা মানুষ যখন ভুলেই যাচ্ছিলেন, তখন তিনি গেয়েছিলেন মর্মবেদনার গান। আত্মার হাহাকার হয়ে উচ্চারণ করেছিলেন মানুষের প্রেম ও বিরহের অপরূপ কথামালা।
নেত্রকোনা অঞ্চলেরই আরেক গুণীজন হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে বারী সিদ্দিকীর উত্থান হলেও তিনি নিজেকে নিবিড়ভাবে তৈরি করেছিলেন গানের জন্য। অসাধারণ সুরেলা বাঁশি বাজাতেন তিনি। দেশে-বিদেশে নিয়েছেন গানের তালিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ উচ্চশিক্ষা ও আধুনিক জীবনের যাবতীয় আয়োজনকে তিনি মিশিয়ে দিয়েছিলেন মরমী গানের ঝরনাধারায়। নিজেকে পরিণত করেছিলেন একজন সাধকের পরিচয়ে। হয়ে উঠেছিলেন একজন নাগরিক বাউল।
গানকে নিয়ে বারী সিদ্দিকী অসামান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চর্চা করেছেন। সুর ও কথাকে নানা সাঙ্গীতিক ধারায় অবগাহন করিয়েছেন। যারা তার একক অনুষ্ঠান টিভিতে কিংবা সরাসরি দেখেছেন, তারা জানেন, কেমন সুনিপুণ কুশলতায় তিনি সুরের ইন্দ্রজাল বিস্তার করতে পারঙ্গম ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের সঙ্গীতজ্ঞ।
গানের দেশ প্রাণের দেশ বাংলাদেশকে যারা পরিচিত করিয়েছেন বিশ্ব ভুবনের সামনে, বারী সিদ্দিকী তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে লোকজ ও মরমী সঙ্গীতের মরা নদীতে প্রাণের স্রোত এনেছিলেন তিনি। গ্রামীণ বাউল বা দেহতত্ত্ব বা বিরহের গানগুলোকে তিনি নিয়ে এসেছিলেন আধুনিক আঙিকের নাগরিক সমাবেশে। অগ্রসর প্রাযুক্তিক মাধ্যমে লোকায়ত গানের একটি সম্মানজনক জায়গা তৈরি করেছিলেন তিনি। বাংলার চিরায়ত গানগুলোকে লোকপ্রিয় এবং বহুলগীত করতেও তার অবদান অনন্য।
বাংলাদেশের নিজস্ব গানগুলোকে সংরক্ষণ ও জনপ্রিয় করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন