
স্টাফ রিপোর্টারঃ নোয়াখালীতে শ্রীঘই শুরু হচ্ছে করোনা ভাইরাসের (কভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষা। জেলার আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে এ নমুনা পরীক্ষা হবে। এক্ষেত্রে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরটি-পিসিআর মেশিন এর সহায়তা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এরমধ্য দিয়ে আশার আলো দেখছেন বৃহত্তর নোয়াখালীর মানুষ।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল কালাম আজাদ নমুনা পরীক্ষার প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করেন। বুধবার রাতে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি ও আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের কিডনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা: ফজলে এলাহী খাঁন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডা: ফজলে এলাহী খাঁন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, দীর্ঘ দ্ইু সপ্তাহের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা অনেকটাই আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আজকে অধ্যক্ষসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে সাক্ষাত করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আরটি-পিসিআর মেশিনের সহায়তা করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর ফলে আনুসাঙ্গিক কিছু কাজ সম্পাদন করার পরে অচিরেই নোয়াখালীতে করোনাভাইরাস সনাক্তকরণ নমুনা পরীক্ষা শুরু করা যাবে। এতে সহযোগিতা করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, নোবিপ্রবি’র শিক্ষক সমিতির সভাপতি, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধন্যবাদ জানান।
এর আগে ৩১ মার্চ আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে ‘করোনা ভাইরাস পরীক্ষা চালু করতে আরটি-পিসিআর মেশিন, টেস্ট কীট ও সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সরবরাহ করতে’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেয় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুছ ছালাম।
চিঠিতে বলা হয়, বৃহত্তর নোয়াখালী অর্থাৎ নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর ও ভোলা অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ বিদেশে চাকরি-ব্যবসা করেন। সে কারণে তাদের পরিবারের সকল সদস্য করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। ফলে এ অঞ্চলের একমাত্র মেডিকেল কলেজ হিসেবে এ কলেজে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা চালু করণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
আরো বলা হয়, এ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে চারজন এম ফিল মাইক্রোবায়োলজিষ্ট ও দুইজন দক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিষ্টসহ একটি অত্যাধুনিক ও সুসজ্জিত ল্যাবরেটরি রয়েছে। সেজন্য এ কলেজে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা চালু করতে আরটি-পিসিআর মেশিন, টেষ্ট কীট ও সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ ও স্থাপন করলে জাতীয়ভাবে করোনা মোকাবেলাসহ এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হতো। তিনি মেশিন, কীট ও সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ ও স্থাপনের অনুরোধ জানান।
সূত্র জানায়, বুধবার আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুছ ছালাম ও ডা. ফজলে এলাহী খাঁন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে দেখা করেন। মহাপরিচালক ৩১ মার্চ দেয়া চিঠির উপর ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে কাজে লাগিয়ে টেষ্ট শুরু করা যায়’ -মর্মে ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরের এডিজি (অ্যাডমিন) কে নির্দেশ দেন। এর ফলে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে, নোবিপ্রবি তাদের আরটি-পিসিআর মেশিন করোনার নমুনা পরীক্ষা ব্যবহার করার আগ্রহ প্রকাশ করে সম্প্রতি জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়।
সূত্রমতে, নোয়াখালী একটি প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা। এ জেলার প্রায় আড়াই লাখ প্রবাসী বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। সরকারি হিসেবে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার প্রবাসী দেশে এসেছেন। এর মধ্যে শুধু মার্চ মাসেই এসেছেন প্রায় ৮ হাজারের বেশি। যার বেশিরভাগই ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী।
করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় জেলার লাখো মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে চারজনের করোনা সনাক্ত ও দুইজন মারা গেছেন। প্রায় শতাধিক ব্যক্তির করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এ জেলায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে জেলাবাসীর পক্ষ থেকে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন।