বিশেষ প্রতিবেদক: বাতাসে দূষিত উপাদানের মাত্রা খুব বেশি—এই খবর পুরোনো। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বায়ুদূষণ মারাত্মক ক্ষতিকর পর্যায়ে চলে যায়—এটাও আমাদের জানা। তবু প্রতিবছর এই মৌসুমে সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তসহ সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়: বায়ুদূষণ মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। তখন পরিবেশ অধিদপ্তর সভার আয়োজন করে, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা সেই সভায় জড়ো হয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। তারপর যে যাঁর বাড়ি চলে যান। কাজের কাজ কিছুই হয় না।
এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। বায়ুদূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ‘মারাত্মক ক্ষতিকর’ মাত্রায় বেড়ে গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের যন্ত্রে বায়ুমানের সূচক ধরা পড়েছে ২৬৯। বলা হচ্ছে দেশে বায়ুদূষণের অবস্থা হয়েছে দিল্লির মতো। দিল্লি কিংবা বেইজিংয়ের বায়ুদূষণ কমানোর সক্রিয় প্রচেষ্টা আছে। বেইজিংয়ের প্রচেষ্টা অনেক কার্যকর; তারা ওই শহরের বায়ুদূষণ ইতিমধ্যে বেশ কমিয়ে আনতে পেরেছে। এ জন্য তারা দূষণ সৃষ্টিকারী অনেক কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে, অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তর করেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনচালিত মোটরযানগুলো রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছে। ডিজেলের পরিবর্তে গ্যাস ও বিদ্যুৎ–চালিত যানবাহন চালু করেছে এবং বিদ্যুৎ–চালিত যানবাহনের প্রচলন বাড়াতে উৎসাহিত করছে।
বায়ুদূষণের কারণগুলোও আমাদের জানা: মহানগরের চারপাশে অজস্র ইটভাটা, রাস্তায় অগণন যানবাহন, সেগুলোর মধ্যে ডিজেলচালিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের যানবাহনের সংখ্যা যে কত তার কোনো লেখাজোকা নেই। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজের ধুলা নিবারণের দিকে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মহানগরের ভেতরেই রয়েছে নানা ধরনের কলকারখানা। সুতরাং বায়ুদূষণ কমাতে হলে কোন কোন কর্তৃপক্ষকে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা আর গবেষণা করে নির্ধারণ করার বিষয় নয়। পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টায় বায়ুদূষণ অবশ্যই কমিয়ে আনা সম্ভব।
এবং তা করতে হবে। কেননা, মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে এই মহানগরে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের। একজন বিশেষজ্ঞ যথার্থই বলেছেন, বায়ুদূষণ এভাবে চলতে থাকলে একটা সময়ে এই শহরে সুস্থ মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই শুধু কথা নয়, কাজ করা প্রয়োজন। কলকারখানা স্থানান্তর, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনবিশিষ্ট যানবাহনগুলো রাস্তা থেকে সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া, চারপাশে ইটভাটার সংখ্যা কমানো এবং নির্মাণকাজের সময় ধুলা নিবারণের পদক্ষেপ নিতে হবে।