লক্ষ্মীপুর বার্তা: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পাঁচ হেভিওয়েট প্রার্থী। তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। স্থানীয়রা সম্ভাব্য এই পাঁচ হেভিওয়েটের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতির বিষয়টিকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছেন।
এই পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন- সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কেন্দ্রীয় সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিকল্পধারা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, বিএনপির সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজান এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ঘরানার বাইরে এই আসনে জেএসডি ও বিকল্পধারার ভোটব্যাংক রয়েছে। এ দুটি দল অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ না হলে এই আসনে চতুর্মুখী লড়াই হবে। তারা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি যে দলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে, তাদের জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অনেকটা সহজ হবে।
এই আসনে ১৯৭৩ সালে সিরাজুল ইসলামের পর গত নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চাইবেন। তার সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ফরিদুন্নাহার লাইলী, রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ এবং দলের জেলা সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান।
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীর অভিযোগ, তার কারণে দীর্ঘদিনেও দলের উপজেলা সম্মেলন হয়নি। ফলে দলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বেড়েছে। পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। অনেকে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। এই অবস্থায় নেতাকর্মীরা দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে নতুন করে সাজিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত। দলে কোনো বিভক্তি নেই। তিনি বলেন, এই এলাকায় মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এসব কারণে তার প্রতি ভোটারদের আস্থা রয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন পাবেন তিনি।
সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেছেন, এ সরকারের সময়ে সারাদেশের মতো এই এলাকায়ও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতেও উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ভোটারদের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। দলের দুঃসময়েও তিনি মামলা-হামলার শিকার নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। নিজেও কারাবরণ করেছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন।
রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ বলেছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। দলীয় কর্মকাণ্ডেও স্থবিরতা নেই। তার দাবি, তিনি রামগতি এলাকার রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এ ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সফিউল বারী বাবু ও তাঁতী দলের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন চৌধুরী।
রামগতি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেছেন, গণতন্ত্রের স্থায়ী বুনিয়াদের জন্য অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। সেই ধরনের নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিলে এবং বিএনপি এতে অংশ নিলে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। নিজান আরও বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম ও দলের দুর্দিনে তিনি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। এসব বিবেচনায় তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন।
একই কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু। নির্দলীয় সরকারের অধীনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে তিনিও দলের মনোনয়ন চাইবেন। তার ধারণা, দল তাকেই মূল্যায়ন করবে।
তাঁতী দলের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন চৌধুরীর দাবি, বিএনপির রাজনীতি করায় তাকে ২০টি মামলার আসামি করা হয়েছে। তবুও তিনি দুর্দিনে দলের পাশে ছিলেন। দলকে সুসংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব বলেছেন, গণতন্ত্র এখন অনেকটাই শৃঙ্খলিত। তাই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দরকার। সেই ধরনের নির্বাচন হলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এই আসনের সাবেক এমপি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে তার দলের নেতাকর্মীরা বলেছেন, এই আসনে আবদুল মান্নানের নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে অবশ্যই তিনি এই আসনে প্রার্থী হবেন।
কমলনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারাকাত দুলাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।