স্টাফ রিপোর্টার: তিনি বলেন, ‘যারা রাজনীতি করি তাদের মধ্যে কয়জন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে আমি সৎ, আমি শতভাগ সৎ মানুষ। এখানেই সমস্যা। আমরা রাজনীতিকরা যদি দুর্নীতিমুক্ত থাকি, তবে দেশের দুর্নীতি অটোমেটিক্যালি অর্ধেক কমে যাবে।’
শনিবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি আয়োজিত ‘৭ই মার্চ: আলোকের ঝর্ণাধারা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিয়েট্রিস কালদুন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সততা আর সাহসের রোল মডেল বঙ্গবন্ধু পরিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বস্বীকৃত সৎ রাজনীতিবিদ। পরিশ্রমী ও কর্মঠ হিসেবেও তিনি সারাবিশ্বে পঞ্চম। এই সততার মূল্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে অবশ্যই রয়েছে। এ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অর্থ পাচার বা দুর্নীতির অভিযোগ নেই। কোনো হাওয়া ভবনের আশীর্বাদ নেই। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা চাকরি করে খান, ভাড়া বাসায় থাকেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ভুলে গিয়ে তার নাম নিয়ে অপকর্ম করেন কেউ কেউ। ভূমি দখল, নদী দখল, বন দখলসহ বঙ্গবন্ধুর নামে যারা চাঁদাবাজি করে, তাদের ঘৃণা করি, তিরস্কার করি। এ ধরনের সংগঠন আমাদের দরকার নেই।’
এর আগে মূল প্রবন্ধে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া- সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে চারণ রাজনীতিকের ন্যায় তিনি সভা-সমাবেশ করেছেন। পাকিস্তানি শোষকচক্র কীভাবে বঞ্চনা করছে তা তুলে ধরেছেন। ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার আহ্বান ও ইয়াহিয়া খানদের বিরুদ্ধে কড়া সতর্কবার্তা। প্রবন্ধে বলা হয়, সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত পৃথিবীর হিংস্রতম সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালিকে ‘যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে’ প্রস্তুত থাকার অমোঘ নির্দেশ যেন সব মারণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী। সমকাল সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে যে মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও তা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘ খুশি হতাম যদি বিরোধী দলগুলোও ৭ মার্চের ভাষণের এই বিশ্ব স্বীকৃতিতে উৎসব করত।’
ড. খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে একটি প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে, ‘বাঙালি জাতিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ এ প্রত্যয় সবার বুকের ভেতরে থাকতে হবে এবং তা পূরণের জন্য কাজ করতে হবে।’
কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বাধীনতার কবি। তিনি ভাষণ শুরু করেছিলেন ‘ভাইয়েরা আমার’ শব্দ দিয়ে। এ ভাষণে তার মধ্যে সম্ভ্রমবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা..।’ আজ রাজনীতিতে সম্ভ্রমবোধের বড়ই অভাব।
ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিয়েট্রিস কালদুন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ভাষণটির ওপর অনেক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। একটি ভাষণের মাধ্যমে একটি জাতিকে একত্রিত করার ইতিহাসের দলিল এটি। ভাষণটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশ এবং এ দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান তিনি।
সেমিনারে শিল্পী বুলবুল মহলানবিশ বলেন, বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ ৭ মার্চ বেতারে প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদে বেতারের বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওইদিন কাজ করেননি। পরদিন ৮ মার্চ তা প্রচার করা হয়।
সেমিনারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সুধীজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন।