স্টাফ রিপোর্টার: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত ধর্ষণ চেষ্টা ও ধর্ষণ মামলায় এজহারভুক্ত ৮ আসামিসহ ১৪জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে পৃথক দুুটি অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই নোয়াখালীর পরিদর্শক মামুনুর রশিদ পাটেটায়ারী ও সিরাজুল মোস্তফা। এরমধ্যে ধর্ষণচেষ্টা মামলার অভিযোগপত্র ৩৩২ পৃষ্ঠার ও ধর্ষণ মামলার অভিযোগত্র ১০০ পৃষ্ঠার।
এরআগে সকাল ১১টায় মাইজদী হাউজিং এলাকায় পিবিআই নোয়াখালী কার্যালয়ে দুই মামলার অভিযোগপত্র বিষয়ে প্রেসবিফিং করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) চট্রগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মুন্সি।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ঘরে ঢুকে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ঘটনার ৩২ দিন পর ৪ অক্টোবর সে ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করা হলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ওঠে। ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
প্রেসবিফিংয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা বলেন, ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পরপরই ৪ অক্টোবর রাতে ৯জনকে আসামি করে নির্যাতন ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। একটি নির্যাতনের ঘটনায়, একটি পর্নোগ্রাফি আইনে।
প্রথম দুই মামলার আসামিরা হলেন- নুর হোসেন বাদল, মোহাম্মদ রহিম, মোহাম্মদ আলী ওরপে আবু কালাম, ই¯্রাফিল হোসেন, মাঈন উদ্দিন সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্যা।
এরপর ৬ অক্টোবর দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ওরপে দেলু ও আগের দুই মামলার আসামি মোহাম্মদ আলী ওরপে আবু কালামের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় ধর্ষণের মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।
ধর্ষণ চেষ্টা ও নারী নির্যাতন মামলা গত ৭ অক্টোবর এবং গত ১৯ অক্টোবর ধর্ষণ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী।
ধর্ষণ চেষ্টা ও নারী নির্যাতন মামলাটি ৬৯ দিনের ৪৮ কার্যদিবসে তদন্তকাজ শেষ করে ঘটনার সাথে জড়িত ১৪ আসামি দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন দেলু, জামাল উদ্দিন ওরপে প্রবাসী জামাল, নুর হোসেন বাদল , মোহাম্মদ আবদুর রহিম, মোহাম্মদ আলী ওরপে আবু কালাম, ইস্রাফিল হোসেন মিয়া, মাঈন উদ্দিন সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ, নুর হোসেন রাসেল, আনোয়ার হোসেন সোহাগ, তারেক, মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগের (ইউপি সদস্য) আদালতে বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন পিবিআই পরিদর্শক মামুনুর রশিদ পাটোয়ারী।
অভিযোগপত্রের ১৪ আসামির মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- নুর হোসেন বাদল, মোহাম্মদ রহিম, মোহাম্মদ আলী ওরপে আবু কালাম, মাঈন উদ্দিন সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, ইস্রাফিল মিয়া ও রহমত উল্যা।
অভিযোগপত্রের এজহার বহির্ভূত আসামিরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন দেলু, নুর হোসেন রাসেল, আনোয়ার হোসেন সোহাগ, মাঈন উদ্দিন সাহেদ।
আসামিদের মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিয়েছেন- নুর হোসেন বাদল, মোহাম্মদ রহিম, মাঈন উদ্দিন সাজু, মোহাম্মদ আলী ওরপে আবু কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ, নুর হোসেন রাসেল, আনোয়ার হোসেন সোহাগ।
অভিযুক্তদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন- জামাল উদ্দিন, আবদুর রব চৌধুরী, মিজানুর রহমান তারেক, মোস্তাফিজুর রহমান আরিফ। তদন্ত শেষে এই মামলা থেকে রহমত উল্যা ও মাঈন উদ্দিন সাহেদকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
গত ১৯ অক্টোবর ধর্ষণ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই। ৫৭ দিনের ৪০ কার্যদিবসে মামলার তদন্ত শেষ করে ঘটনার সাথে জড়িত এজাহারভুক্ত আসামি দেলোয়ার হোসেন দেলু ও মোহাম্মদ আলী ওরপে আবু কালামের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পিবিআই পরিদর্শক সিরাজুল মোস্তফা। এই মামলা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী ওরপে আবু কালাম।
মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মুন্সি।