Select Page

আজ সোমবার, ৫ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি সময়: রাত ৮:২৮

সুবর্ণচরে মাকে হত্যায় ছেলেসহ ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

দৈনিক নোয়াখালীবার্তা
Noakhali Barta is A News Portal of Noakhali.

জানু ২৪, ২০২৩ | নোয়াখালী, সুবর্ণচর

   

ষ্টাফরিপোর্টার:নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নে নুরজাহান বেগম (৫৭) নামে এক নারীকে নয় টুকরো করে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় নিহতের ছেলেসহ ৭ আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফার সুলতানা এ রায় প্রদান করেন।
ফাঁসির আদেশ পাওয়া আসামিরা হলো, নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির হুমু (৩২), মোহাম্মদ নিরব (২৬), নুর ইসলাম (৩২), মো. আবুল কালাম (৩০), সুমন (৩৩), মো. হামিদ (২৮) ও ইসমাইল হোসেন (৩০)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গুলজার আহমেদ জুয়েল বলেন, এ হত্যার ঘটনায় প্রথমে নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির হুমা (৩২) বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার সূত্র ধরে পুলিশি তদন্তে হত্যার সঙ্গে সরাসরি সন্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একইসঙ্গে তার সাত সহযোগী মিলে এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ পায় পুলিশ।


তিনি আরো বলেন, রায় ঘোষণার সময় আদালতে ৭ আসামি উপস্থিত ছিলেন। এই মামলায় ২৭জনের স্বাক্ষী গ্রহণ করা হয়। আসামিদের মধ্যে ৫জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। একইসঙ্গে আটক নিহতের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল ও নিহতের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়।
রায় ঘোষণার পর আদালত পাড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনরা। মামলার ৩ নম্বর আসামি নুর ইসলামের মা আমেনা বেগম বলেন, আমার ছেলে সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। ঘটনার কয়েক দিন পর পুলিশ আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে অন্যায়ভাবে জেলে পাঠিয়ে দেয়। আমরা ন্যায় বিচার চাই।
নুর ইসলামের স্ত্রী মুনিয়া আক্তার বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর মানুষ, আমার একমাসের একটি সন্তান, এই সন্তান নিয়ে আমি কার কাছে যাবো। কে আমার সন্তানকে দেখবে। আমার স্বামী নির্দোষ, আমি ন্যায় বিচার চাই। আরেক আসামি বেলাল হোসেনের ভাই বলেন, আমার ভাইয়ের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। সে এই ঘটনায় কোনভাবেই জড়িত ছিল না। আমরা গরিব মানুষ, হাইকোর্টেও যেতে পারবো না। এত টাকা কোথায় পাবো, কার কাছে যাবো। আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
নিহত নুরজাহান বেগমের মা কদবানু বলেন, আমার মাইয়ারে (মেয়ে) কাডি (কেটে) টুকরা করি হালাইছে, মারি হালাইছে। আমি হেতাগো (আসামিদের) হাঁশি (ফাঁসি) চাই।
আসামি পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, সরকার পক্ষ মামলা প্রমাণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই রায়ে আসামি পক্ষ সংক্ষুব্ধ। আসামি পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
উল্লেখ্য, নিহত ওই নারীর ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিহত নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে ছিল। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মাকে জিম্মায় রেখে কয়েকজনের কাছ থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নেয় সুদের ভিত্তিতে। তবে ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যায়। এরপর ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ প্রয়োগ করে। হুমায়ুন তার মাকে বিষয়টি অবহিত করেন। এ সময় তার মা ১৩ শতক জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করতে বলেন। হুমায়ুন জবাবে, মাকে জানান তার মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা হোক। এতে তার মায়ের অসম্মতি ছিল। অন্যদিকে ওই নারী তার ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য সে তার ভাইকে প্রায় চাপ প্রয়োগ করত। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এছাড়া তার প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদেরও বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। এজন্য তারাও হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করে।
হুমায়ুন জবানবন্দিতে জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে দুই শতাংশ হামিদকে ও বাকি আট শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। তারপর মায়ের জমি সমান পাঁচ ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ প্রতিশ্রুতিতে তারা গত ৬ অক্টোবর বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের ওপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। পরে তারা রাতের কোনো এক সময়ে ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে নয় টুকরো করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখে।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ সংবাদ

Archive Calendar

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০