Select Page

আজ রবিবার, ২৬শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ৩রা রমজান, ১৪৪৪ হিজরি সময়: সকাল ৬:২৫

জন্মান্ধ তাসপি মায়ের মুখে শুনে শুনে পড়াশোনা,পেয়েছেন জিপিএ-৫

দৈনিক নোয়াখালীবার্তা
Noakhali Barta is A News Portal of Noakhali.

ফেব্রু ১০, ২০২৩ | কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী

ষ্টাফরিপোর্টার:

মায়ের মুখে শুনে শুনে পড়াশোনা করে এ বছর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সরকারি মুজিব কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন রিজওয়ান ইসমাম তাসপি। এর আগে, এসএসসিতে তাসপির ফল ছিল জিপিএ-৪.৭২। জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন তিনি।
রিজওয়ান ইসমাম তাসপি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও শাহনাজ পারভিন দম্পতির একমাত্র ছেলে। তাদের দুই ছেলে-মেয়েই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। মেয়ে রেজমিন ইমরোজের সামান্য দৃষ্টিশক্তি থাকলে ও রিজওয়ান ইসমাম তাসপি পুরোপুরি দৃষ্টিহীন।
জানা যায়, তাসপির বাবা মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া চট্টগ্রাম জিপিওতে চাকরি করেন। মা শাহনাজ পারভীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ছোটবেলা থেকেই তাসপির পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকার কারণে তাকে চট্টগ্রামের মুরাদপুর সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৪১ পান তিনি। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর আবার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তাসপি।
পরে তার মায়ের কর্মস্থল কোম্পানীগঞ্জের উত্তর চর কাঁকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম) ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। জেএসসি পাস করার পর কোম্পানীগঞ্জ মডেল হাইস্কুলে ভর্তি হন।
পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাসপির একমাত্র সঙ্গী ছিলেন তার মা শাহনাজ পারভিন। তিনি বই পড়ে শোনাতেন, ছেলে তা শুনে মুখস্থ করত। কখনও মা বই পড়ে রেকর্ড করে রাখতেন, যা পরবর্তীতে শুনে মুখস্থ করতেন তাসপি।
তাসপির মা শাহনাজ পারভিন বলেন, ‘আমার ছেলের অন্যদের মতো না। শিক্ষক আর মায়ের মুখ থেকে শুনে সে পড়াশোনা করত। তাই তার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। সে প্রচ- মেধাবী, ফলে কোনো পড়া একবার শুনলে তার মুখস্থ হয়ে যেত।’
তিনি বলেন, ‘জেএসসি পরীক্ষায় তাসপি জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এসএসসিতে গণিতে সঠিকভাবে শ্রুতিলেখক না পাওয়ায় জিপিএ-৫ পায়নি। তবে, এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তাসপির বন্ধুরা তাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। তাসপির স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়া।’
তাসপির বাবা মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘তাসপির এমন ফলাফলে খুবই ভালো লাগছে। যারা তার পড়াশোনায় ভূমিকা রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সে যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে সেই দোয়া করবেন।’
তাসপির সহপাঠী আসিফুল ইসলাম ইফাত বলেন, ‘সে আমাদের কলেজের গর্ব। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও তাসপি পড়াশোনা করে জিপিএ-৫ পেয়েছে।’
রিজওয়ান ইসমাম তাসপি বলেন, ‘শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হতে চাই। আমার মতো কোনো শিক্ষার্থীকে যেন এত কষ্ট না করতে হয়, সেজন্য কাজ করতে চাই। আমার পড়াশোনায় সব থেকে বেশি ভূমিকা মায়ের। শিক্ষক-সহপাঠীরাও অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে শ্রুতিলেখকের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
সরকারি মুজিব কলেজের শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে ১০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, তার মধ্যে তাসপি একজন। তাসপি খুব বুদ্ধিমান ছেলে। ক্লাসে যা পড়াতাম সেগুলো সে মনোযোগ দিয়ে শুনত, আর রেকর্ড করে নিত। সে কখনো ক্লাস ফাঁকি দেয়নি।’
সরকারি মুজিব কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন বলেন, ‘দৃষ্টিহীন তাসপির পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। এ কারণেই সে সফল হয়েছে। করোনার সময় যে কয়জন শিক্ষার্থী নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস করেছে, তাসপি তাদের মধ্যে অন্যতম।’

Facebook Comments Box

সর্বশেষ সংবাদ

Archive Calendar

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১